কারিগরি শিক্ষায় দূর হবে কর্মসঙ্কট

আগামী বছর থেকে মাধ্যমিক পর্যায়ে কারিগরি শিক্ষা অন্তর্ভুক্ত হচ্ছে বলে জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী। তিনি বলেছেন, এ বছর ৬৪০টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কারিগরি বিষয়টি শুরু হয়েছে। আগামী বছর থেকে মাধ্যমিক, মাদ্রাসা বা সাধারণ শিক্ষার ৬ষ্ঠ শ্রেণি থেকে ৮ম শ্রেণি পর্যন্ত সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কারিগরি শিক্ষা পাবে সব শিক্ষার্থীরা। নবম ও দশম শ্রেণিতে দুটি কারিগরি বিষয় পড়ানো হবে। এর মধ্যে অন্তত একটি বিষয় বাধ্যতামূলকভাবে পড়তে হবে, যাতে আত্মকর্মসংস্থান করতে পারবে শিক্ষার্থীরা। মাধ্যমিক পর্যায়ে কারিগরি শিক্ষা অন্তুর্ভুক্তির উদ্যোগটি প্রসংশনীয়। কারিগরি শিক্ষায় তত্ত্বীয় পড়াশুনার চেয়ে বাস্তব প্রয়োগে বেশি গুরুত্ব দেয়া হয়, যাতে করে একজন কারিগরি শিক্ষায় শিক্ষিত ব্যক্তি নিজের যোগ্যতাকে কাজে লাগিয়ে সবচেয়ে ভালো কাজের সুযোগ খুঁজে নিতে পারে। বাস্তব কাজের অভিজ্ঞতা থাকায় কারিগরি শিক্ষাকে চাকরির ক্ষেত্রেও খুব গুরুত্বের সাথে দেখা হয়। একজন চাইলে খুব সহজেই কারিগরি শিক্ষা গ্রহণ করে নিজের পূর্বের কাজ থেকে বেরিয়ে নতুন কাজ করতে পারে এবং নিজের ক্যারিয়ারকে সমৃদ্ধ করতে পারে।

 

প্রতিযোগিতার বাজারে কারিগরি শিক্ষা যোগ্য প্রতিযোগী তৈরিতে বেশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে এ ব্যাপারে কোন সন্দেহ নেই। সমমানের শিক্ষা ব্যবস্থার পাশাপাশি এই পদ্ধতি কার্যকর এবং যুগোপযোগী। শিক্ষায় উন্নত দেশগুলোতে আমরা কারিগরি শিক্ষা কার্যক্রমের প্রসারিত চিত্র দেখতে পাই। ইতিহাস থেকে জানা যায়, কারিগরি শিক্ষার যাত্রা শুরু হয় ১৯৬৯ সালে জার্মানিতে। জার্মানিতে প্রচলিত রয়েছে ডুয়েল ভোকেশনাল ট্রেনিং, যা বিশ্বব্যাপী সমাদৃত। এখানে একই সাথে একজন শিক্ষার্থী ভোকেশনাল ট্রেনিং স্কুলে অধ্যয়ন করে এবং একটি সত্যিকারের কোম্পানি/ইন্ডাস্ট্রিতে কাজ করে বাস্তব জ্ঞান লাভ করে। এখানে ভোকেশনাল স্কুলে প্রধানত তত্ত্বীয় অংশ, যা ইন্ডাস্ট্রিতে কাজের জন্য দরকার সেটা শিখানো হয়, আর বাস্তব অভিজ্ঞতা এবং কাজের সুযোগ মেলে কোম্পানিতে। আমাদের দেশেও কারিগরি শিক্ষার গুরুত্ব অপরিসীম।

 

 

দেশের চাহিদা মেটানো ও বিদেশে জনশক্তি রপ্তানিতে ব্যাপক কারিগরি শিক্ষা প্রয়োজন। কেননা আমাদের জনশক্তি বিশাল। এখানে বাইরের বাজার না ধরতে পারলে আমাদের পিছিয়ে পড়ার আশঙ্কা থেকে যাবে। জনশক্তি রপ্তানিতে আমরা এখনো অদক্ষ ক্যাটাগরিতেই রয়ে গেছি। তবে বাংলাদেশে কারিগরি শিক্ষার ক্ষেত্রে এখনও অনেকগুলো অসুবিধা রয়ে গেছে। এগুলোর মধ্যে কম সংখ্যক কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, দক্ষ প্রশিক্ষকের অভাব, মানসম্মত কারিগরি শিক্ষার অভাব, শিক্ষার্থীদের উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানের স্বল্পতা, কাঁচামাল সংকট ইত্যাদি কারণে পিছিয়ে পড়ছেন কারিগরি শিক্ষার্থীরা। এজন্য মাধ্যমিক পর্যায়ে অর্থাৎ স্কুল-মাদ্রাসাগুলোতে বাধ্যতামূলক করিগরি শিক্ষা প্রদান করা হলে এই অসুবিধাগুলো কাটিয়ে উঠতে সহায়ক হবে। বেশিরভাগ শিক্ষার্থী কারিগরি শিক্ষায় শিক্ষিত হলে আত্মকর্মসংস্থানের মাধ্যমে দেশে যে কর্মসঙ্কট রয়েছে তা দূর হবে বলে আশা করি।